প্রাণী রাজ্য

Animals Life in Bengali Description

Showing posts with label বানর(Monkey). Show all posts
Showing posts with label বানর(Monkey). Show all posts

লাজি বানর

বানরটির বসবাস গভীর বনজঙ্গলের ঝোপঝাড়ে, গাছের ফাঁকে বা ভেতরে। স্বভাবতই লাজুক প্রকৃতির। প্রায় সময় নিজেকে লুকিয়ে রাখে। ভালোবাসে স্বজাতি, পরিবার নিয়ে বসবাস করতে। দেখতে ধূসর, চোখের রং লালচে।

আসামী বানর

বাংলা নাম- আসামী বানর
ইংরেজি নাম : Assamese macaque.
বৈজ্ঞানিক নাম : Macaca assamensis
বাংলাদেশে বর্তমান অবস্থান : অরক্ষিত (VU)

আকারে বড় , চৌক –ফ্যাঁকাসে রঙ্গা মুখ । লেজ মাঝারী । লোম বাদামী থেকে ধূসর বাদামী । ওজন প্রায় ১০থেকে ১৪ কেজি । আসামী বানর দলে থাকে । ১০ থেকে ৫০ টি পর্যন্ত একেক দলের সদস্য হতে পারে । আসামী বানর গভীর বনে থাকতে পছন্দ করে । এরা একসাথে চীৎকার করে মাটিতে নামে । তবে এরা দলে থাকে । একেকটি দলে ৫ থেকে ৬০ টা পর্যন্ত বানর থাকতে পারে ।
ফল, বীজ, কচি পাতা ও কাণ্ড সহ পোকামাকড় , এর খাদ্য তালিকায় আছে । আসামী বানর দিনে প্রায় ২ কিলোমিটার পর্যন্ত ঘুরেবেরায় ।
আসামী বানর বাংলাদেশের কক্সবাজার , চট্টগ্রাম মের পাহাড়ি বনে এদের দেখা যায় ।
হুমকি- আবাস ধ্বংস ফলে খাদের অভাব ও মাংসের জন্য শিকার ।

লেখা – ঋজু আজম

পারা বানর

বাংলা নাম- পারা বানর
ইংরেজি নাম : Crab-eating macaque.
বৈজ্ঞানিক নাম : Macaca fascicularis
বাংলাদেশে বর্তমান অবস্থান : অতি বিপন্ন (CR)

মাঝারী গড়ন । দেহের চেয়ে লম্বা কালচে লেজ । হাল্কা-গোলাপি মুখের রং । পুরুষ পারা বানর স্ত্রী বানরের চেয়ে আকারে বড় । ওজন প্রায় ৩ থেকে ৮ কেজি । দলে থাকে । ২০ টি পর্যন্ত একেক দলের সদস্য হতে পারে । এরা বৃষ্টিঝরা বন, উপকূলীয় বা জোয়ারভাটার বন , নদী আছে এমন বনে থাকতে পছন্দ করে । ছোট বাচ্চার শরীরের লোম কালো হয় , তবে বয়সের সাথে সাথে ছাই বা ছাই ধূসর হয় ।
পাখি,পাখির ডিম, ব্যাঙ, টিকটিকি, পোকামাকড় , ফল, বীজ, কচি পাতা এর খাদ্য তালিকায় আছে । বাংলাদেশের কক্সবাজার , নাফ নদীর পাশের বনে এদের দেখা যায় ।
হুমকি- আবাস ধ্বংস ও ফলে খাদের অভাব ও মাংসের জন্য শিকার ।

লেখা – ঋজু আজম

খাটোলেজি বানর

খাটোলেজি বানরের ইংরেজি নাম : Stump tail macaque. আর বৈজ্ঞানিক নাম : Macaca arctoides.

আকারে বড় , দেহ লম্বা মসৃণ লোমে ঢাকা। মুখ লালচে। লেজ খুব ছোট। ওজন প্রায় ৯.৯ থেকে ১০.২ কেজি। খাটোলেজি বানর মাটিতে বা নদীর পারে একা চলতে পছন্দ করে। তবে এরা দলে থাকে। একেকটি দলে ৫ থেকে ৬০ টা পর্যন্ত বানর থাকতে পারে। অক্টোবর থেকে নভেম্বর এদের প্রজনন কাল।

ফল, বীজ, কচি পাতা ও কাণ্ড সহ পোকামাকড় , পাখি , পাখির ডিম খাটোলেজি বানর এর খাদ্য তালিকায় আছে। এরা জুম ফসল বা মানব বসতির কাছে জঙ্গলে থাকতে পছন্দ করে।

খাটোলেজি বানর বাংলাদেশের কক্সবাজার , চট্টগ্রাম মের পাহাড়ি বনে এদের দেখা যায়।

হুমকি- আবাস ধ্বংস ফলে খাদের অভাব ও মাংসের জন্য শিকার।

লেখা – ঋজু আজম

লজ্জাবতী বানর

লজ্জাবতী বানরের ইংরেজি: Slow Loris. আর বৈজ্ঞানিক নাম: Nycticebus bengalensis এর বাংলাদেশে বর্তমান অবস্থান সম্পর্কে কোন পরিসংখ্যান নেই। 
বাংলাদেশের বানরকুলে লজ্জাবতী বানর আকারে সবচেয়ে ছোট ২৬ থেকে ৩৮ সেমি, ওজন ১.৫ কেজি । লেজ খুব ছোট। হাত –পায়ে আঁকড়ে ধরার শক্তি বেস। চোখ দেহের তুলনায় বেস বড় বড় । ফল, কীটপতঙ্গ , পাখির ডিমও খায় । স্বভাবে লাজুক নিশাচর , বৃক্ষবাসী । নিজ এলাকা পেশাপ ছিটিয়ে সনাক্ত করে । বছরে একটি , কদাচিৎ দুটি বাচ্চাদেয় । বাচ্চা মা বা বাবার পেটের সাথে ঝুলে থাকে । লজ্জাবতী বানর ১৪ বছর পর্যন্ত বাঁচে । 

চির সবুজ থেকে মিশ্রবনে এদের বাস । বাংলাদেশের সিলেট , চিটাগাং পাহাড়ি বনে আছে ।
হুমকি: মিশ্রবন উজাড় করে বাণিজ্যিক একক গাছের চাষের ফলে বসতি ধ্বংস ও শিকার ।

লেখা- ঋজু আজম

লেসুলা

কিছু বিজ্ঞানী বলছেন, কঙ্গোর গভীর জঙ্গলে তারা বানরের একটি নতুন প্রজাতি আবিষ্কার করেছেন। স্থানীয় শিকারিদের কাছে প্রজাতিটি পরিচিত হলেও বাইরের পৃথিবীতে এটা সম্পূর্ণ অপরিচিত। একটি জার্নালে বিজ্ঞানীরা এই নতুন প্রজাতির বৈশিষ্ট্যগুলো তুলে ধরেন এবং এর নাম দেন সারকোপিথেকাস লোমামিয়েনসিস। মধ্য কঙ্গোর লোমামি বনের অববাহিকায় বসবাসরত এসব প্রাণী স্থানীয় বাসিন্দাদের কাছে লেসুলা নামে পরিচিত। বিজ্ঞানীদের মতে, বিগত আটাশ বছরের মধ্যে এটি দ্বিতীয়বারের মতো বানরের প্রজাতি উদ্ভাবন।

লেসুলার মুখের অনেকটা অংশ লোমহীন। এদের নাক বেশ লম্বা। মাথা ও মুখের পাশে উজ্জ্বল লোম রয়েছে। জিন বিশ্লেষণ করে বিজ্ঞানীরা বলেন, বানরগুলো জুয়েনন গোষ্ঠীর।
কঙ্গোর মধ্যাঞ্চলের সাড়ে ছয় হাজার বর্গকিলোমিটারের মধ্যে লেসুলার বিচরণ। একদল আদিবাসী এই বানর শিকার করে খায়। এ জন্য হুমকির মুখে রয়েছে লেসুলার অস্তিত্ব। 

চশমাপরা হনুমান

চোখের চারপাশে গোল সাদাটে দাগ থাকায় দূর থেকে মনে হয় যেন চশমা পরেছে । তাই এদের নাম চশমাপরা হনুমান Phayre’s Langur ।

শরীর কালচে বাদামী , বুকের দিকটা সাদাটে । লেজ লম্বা । বাচ্চারা বাদামী হয় । । শরীরের দৈর্ঘ্য হয় সাধারণত ৫৫ থেকে ৬৫ সেমি., লেজের দৈর্ঘ্য হয় প্রায় ৬৫ থেকে ৮০ সেমি । আমাদের বাংলাদেশের পাহাড়ি বন গুলতে এদের বাস । তবে এরা বাশবন বেশী পছন্দ করে । চট্টগ্রাম ও সিলেট অঞ্চলের বন গুলতে কিছু মাত্র চশমাপরা হনুমান টিকে আছে । এরা সামাজিক প্রাণী , দলে থাকতে পছন্দ করে । ৩ থেকে ১৯ টি মিলে এদের দল হয়ে থাকে । এক দলে একাধিক স্ত্রী বা পুরুষ থাকে ।

চশমাপরা হনুমান মূলত উদ্ভিদ ভোজী । কচি পাতা , ফুল- ফল খায় । চশমাপরা হনুমান গাছবাসি , গাছে গাছেই জীবন পার করে দেয় । মাটিতে সহজে নামতে চায় না । বিপদের আশঙ্কা দেখলে চিৎকার করে দলের অন্যদের সাবধান করে দেয় ।

বাংলাদেশের প্রাইমেট প্রজাতির মধ্যে চশমাপরা হনুমান অতি মাত্রায় বিপন্ন ।দিন দিন আবাস ধ্বংসের ফলে আশ্রয়হীন হয়ে চশমাপরা হনুমান বিলুপ্তির দ্বারপ্রান্তে ।

লেখা – ঋজু আজম
ছবি - ইন্টারনেট

কিপুনজি

নতুন ধরনের এই বানরটি ওয়াইল্ড লাইফ কনজারভেশন সোসাইটির জীববিজ্ঞানী টিম ড্যাভেনপোর্ট ২০০৩ সালে আবিষ্কার করেন।
তিনি তানজানিয়ার রুঙ্গী পর্বতে কাজ করার সময় স্থানীয় লোকেরা যেসব পশু স্বীকার করত এবং সেসব পশু সম্পর্কে তারা জানত তার খোঁজ নেন।
কিছু লোক কিপুনজি নামে একটি নতুন ধরনের বড় বানরের কথা জানায়। সর্বশেষ গণনায় দেখা যায় ১১১৭টি কিপুনজি আছে। তাই কিপুনজি বিপন্ন হওয়ার মুখে।

টিটি বানর

সম্প্রতি ঘন ঝোপের মতোই একগুচ্ছ লাল দাড়িওয়ালা বানরের সন্ধান পেয়েছেন ফ্রান্সের বিজ্ঞানীরা। আমাজন রেইন ফরেস্টের কলাম্বিয়ান অংশে নতুন প্রজাতির এই বানরের খোঁজ পেয়েছেন তারা। খবর গুগল নিউজের।

সংবাদমাধ্যমটির বরাতে জানা গেছে, বিজ্ঞানীরা এই প্রজাতির বানরের নাম দিয়েছেন ক্যাকুয়েটা টিটি বানর।

গবেষকদের বরাতে সংবাদমাধ্যমটি জানিয়েছে, এই বানর অনেকটা বিড়াল আকৃতির। আর এই বানর আগ্রহ সৃষ্টি করার কারণ এর সঙ্গী পছন্দ করার বিচিত্র ধরণের জন্য। এই টিটি বানরকে দেখা যায় গাছের ডালে লেজ জাড়িয়ে বসে থাকতে।

জানা গেছে, এই প্রজাতির বানর প্রতি বছর একটি করে বাচ্চা জন্ম দেয়। আর বাচ্চার দেখাশোনা করে বাবা বানর। আর বিবর্তনের কারণেই বাবারা এই জাতীয় বানরের বাচ্চাদের দেখাশোনা করে বলেই গবেষকরা জানিয়েছেন। অবশ্য, ১৯৬০ সালে এক বিজ্ঞানী Callicebus caquetensis নামে এক প্রজাতির টিটি বানর আবিষ্কারের কথা জানিয়েছিলেন।

গবেষণার ফল প্রকাশিত হয়েছে ‘প্রাইমেট কনভারশেসন’ সাময়িকীতে।

রিস্যাস বানর

নাম শুনে অচেনা লাগলেও, এই প্রজাতির বানর আমাদের সবার কাছে সুপরিচিত। পুরান ঢাকার বাড়িগুলোর ছাদে আগে এই বানর দেখা যেত এখন দেখা যায় না। সেই বাদামি রঙের শরীরের গোলাপিমুখো বানরের নামই রিস্যাস বানর (Rhesus Macaque)। গ্রিকপুরাণের এক রাজার নাম রিস্যাস, সেই রাজার নামেই এই বানরের নামকরণ, কেন? তা জানা যায়নি। গড়ে এরা ৫৩ সেন্টিমিটার লম্বা হয়, গড় ওজন : ৭.৭ কিলোগ্রাম। এদের গড় আয়ু ২৫ বছর এবং লেজের দৈর্ঘ্য সর্বোচ্চ ২৩ সেন্টিমিটার। ভারত, পাকিস্তান, নেপাল, বাংলাদেশ, মায়ানমার, থাইল্যান্ড, আফগানিস্তান ও চীনে রিস্যাস বানর বেশি দেখা যায়। বৈজ্ঞানিক নাম Macaca mulatta।

ম্যাকাকুর বানর


আশ্চর্য বানর ম্যাকাকুরের বাসস্থান দক্ষিন পূর্ব এশিয়ার থাইল্যান্ড ও মালয়েশিয়া । থাইল্যান্ড এবং মালয়েশিয়ার বিস্তীর্ণ উপকূলীয় এলাকার মানুষের প্রধান জিবীকা নারকেল সংগ্রহ। শত শত মাইল সমুদ্র উপকূলীয়বর্তী লবনাক্ত মাটিতে ও লোনা জলজ আবহাওয়ায় প্রকৃতিকভাবেই প্রচুর নারকেল জন্মে। এসব গাছ ৩০/৪০ ফুটেরও বেশী উঁচু হয়ে থাকে। কোন কোন গাছ ৬০/৭০ ফুটও উচু হয়ে থাকে। উঁচু এসব গাছে প্রচুর নারকেল হয়ে থাকে। ১জন মানুষ দিনে ৩/৪শ নারকেল সংগ্রহ করতে পারে কিন্তু ১টি ম্যাকাকুর বানর সারাদিনে ৫/৭শ নারকেল সংগ্রহ করতে পারে অবলীলায়। আর এই কাজটি ম্যাকাকুর বানর খুব আনন্দের সংগেই করে। নারকেল গাছে উঠার সহজাত দক্ষতা নিয়েই জন্মায় ম্যাকাকুর বানর। শুধু গাছে উঠিয়ে দিলেই হলো। তরতর করে নিমিষেই গাছের মাথায় উঠে যাবে ম্যাকাকুর বানর। তারপর পরিপক্ক নারকেল বেছে সংগ্রহ করে। এই কাজে তাদের যেন কোনো ক্লান্তি নেই। নারকেল সংগ্রহ করা এদের কাছে অনেকটা খেলার মত। শুধু গাছে উঠে নারকেল সংগ্রহই নয়, গাছের নিচে জমাকৃত নারকেলগুলো মালিকের সহয়তায় কাধে করে একটা নারকেলের ডালের লাঠিতে ঝুলিয়ে অনেকটা মানুষের মত দুপায়ে হেঁটে হেঁটে বহন করে নিয়ে গাড়িতে তুলে দিয়ে আসে। 
গাড়িতে সব নারকেল তোলা হলে মালিকের  সংগে চেপে বসে গাড়িতে। বাড়ীতে এসেও বসে থাকেনা ম্যাকাকুর বানর। গাড়ি তেকে নারকেল নামাতে ঘরে কিংবা গুদামে নির্ধারিত স্থানে সাজিয়ে রাখতেও মালিককে সহয়তা করে। সব নারকেল সাজানো হয়ে গেলে রাতে মালিকের সঙ্গেই খেতে বসে ম্যাকাকুর বানর। পরিবারের একজন সদস্যের মতসুযোগ সুবিধা ভোগ করে ম্যাকাকুররা। বাড়ীর লোকজন যা খায় প্রায় সব খাবারই দিয়ে থাকে ম্যাকাকুরকে। নারকেলের তৈরী পিঠা ও ফল জাতীয় খাবার ম্যাকাকুররা খুবই পছন্দ করে। তাই তাদের এ ধরণের খাবার দেওয়া হয়ে থাকে।

উল্লুক

উল্লুক আকার, আকৃতি ও আচরণে গোরিলা কিংবা শিম্পাঞ্জির মতো দেখতে লেজহীন। গিবন জাতের প্রাইমেটদের মধ্যে আকারে দ্বিতীয় বৃহত্তম। বৃহত্তমটি সিয়ামাং। এদের দৈর্ঘ প্রায় ৬০ হতে ৯০ সেমি, এবং ওজন ৬ হতে ৯ কেজি। পুরুষ উল্লুক আর মেয়ে উল্লুক আকারে প্রায় একই সমান হলেও এদের গাত্রবর্ণের মধ্যে বেশ পার্থক্য রয়েছে। খাদ্যের মধ্যে বিভিন্ন ধরনের ফল ও ডুমুর খায় উল্লুক। তবে কচিপাতা, ফুল, পোকামাকড়ও এদের অনেক প্রিয়। সকালের দিকে হা-হু শব্দ করে দলগত অবস্থান জানান দেয় এরা। বাচ্চা দেয় দুই তিন বছর পরপর। শীত ঋতুতে। বাচ্চা উল্লুকের রঙ দুধের মতো সাদা। ছয় মাসের মধ্যেই রঙ বদলে হয়ে যায় কালো। তবে বয়স বাড়ার সঙ্গে সঙ্গে (৬/৭ বছর) পুরুষ কালোই থেকে যায়। আর স্ত্রী উল্লুক হলুদাভ বর্ণ ধারণ করে। এদের আয়ু প্রায় ২৫ বছর।
দেশের ১০ প্রজাতির বানরের মধ্যে ৮টিই কোনো না কোনোভাবে হুমকির সম্মুখীন। এদের মধ্যে সবচেয়ে বিপন্ন উল্লুক। তবে আশঙ্কার বিষয়- উপযুক্ত আশ্রয় ও খাদ্যাভাবে বাংলাদেশে মহাবিপন্ন প্রজাতির তালিকায় থাকা উল্লুকের টিকে থাকা দায় হয়ে পড়েছে। গত দুই দশকে এর সংখ্যা তিন হাজার থেকে কমে নেমে এসেছে ৩০০-এ। বন্যপ্রাণীবিদদের মতে, বিশ্বব্যাপী বিপন্নপ্রায় উল্লুক বাংলাদেশে মহাবিপন্ন প্রজাতি হিসাবে চিহ্নিত। ক্রমশ এদের আবাসস্থল বিলুপ্ত হয়ে পড়ায় বানরপ্রজাতির মধ্যে সবগুলোই কোনো না কোনোভাবে হুমকির সম্মুখীন। আর একবার ডাকাডাকি শুরু করলে বনের যে প্রান্তেই থাকুন না কেন টের না পেয়ে উপায় নেই। একটা উল্লুক হু-হা হু-হা করে ডাক দিলে তার সঙ্গে যোগ দেয় আরো কয়েকটা।
bdnews24

প্রবোসিস বানর

এই বানর তার লম্বা, মাংশল ও অদ্ভুত নাকের জন্য বিখ্যাত। এদের গায়ের রঙ হালকা বাদামী। বিশ্বের মধ্যে একমাত্র বোর্ণিও দ্বীপের উপকূল অঞ্চলে এরা বাস করে। বিপন্ন প্রাণীর খাতায় নাম লিখিয়ে বর্তমানে এরা বিলুপ্তির পথে। বোর্ণিও দ্বীপে তিনটি দেশের অংশ আছে। মালয়েশিয়া, ইন্দোনেশিয়া এবং ব্রুনেই এর অধিকারভুক্ত বোর্ণিও দ্বীপের নদী কিংবা স্বাদু জলের আশেপাশে ম্যানগ্রোভ বন এবং নিম্নভূমিতে এরা বাস করতে পছন্দ করে। নদীর ৬০০ মিটারের বেশি দূরে এদেরকে কম দেখা যায়।
Proboscis Monkey'র বৈজ্ঞানিক নাম Nasalis larvatus। এরা Monyet Belanda, Bekantan, Long-nosed Monkey নামেও পরিচিত।

এরা সাধারণত গাছে থাকে। তবে স্থান পরিবর্তন করার জন্য কখনও কখনও মাটিতে নেমে আসে। এদের সাধারণত সকালবেলায় খাবার গ্রহণ করে থাকে। দিনের বাকী অংশটা গাছের ডালে বিশ্রাম নিয়ে ও ঘুমিয়ে কাটায়। আবার সন্ধ্যা হবার পূর্ব মুহূর্তে খাবার গ্রহণ করা শুরু করে। এদের প্রধান খাদ্য বিভিন্ন রকমের ফল, বীজ এবং গাছের কচি পাতা। এদের পাকস্থলী কয়েকভাবে বিভক্ত। হজমের কাজ চলার সময় এদের পাকস্থলী প্রচুর গ্যাস তৈরি করে। এর ফলে এদের পেট বেশ মোটা হয়। শরীরে বেশিরভাগ অংশই এদের এই পেট।
এরা ১১-৩২ জনের দলে দলভূক্ত থাকে। তবে কোন কোন দলে ৬০ থেকে ৮০টি বানরকে একসঙ্গে দেখা গেছে। এই বানরদের সবচাইতে দর্শণীয় অঙ্গ হল পুরুষ প্রজাতির নাক। নারী প্রজাতির নাক অবশ্য পুরুষদের মত বড় হয় না। তবে সাধারণ বানরদের চাইতে বড় হয়। পুরুষদের নাক এত বড় হয় যে তা মুখের উপর ঝুলে থাকে। কোন কিছু খাওয়ার সময় হাত দিয়ে সরিয়ে দিতে হয়। যখন এরা রেগে যায় তখন এই নাক লাল হয়ে যায়।
এরকম অদ্ভূত নাক থাকার কারণ কি তা বিজ্ঞানীরা জানতে পারেননি। তবে কোন কোন প্রাণীবিজ্ঞানী ধারণা করেন এর সাথে হয়তো প্রজননের কোন সম্পর্ক থাকতে পারে। কারণ দেখা গেছে স্ত্রী প্রজাতির বানররা লম্বা নাকওয়ালা পুরুষদেরকে বেশি পছন্দ করে।
পুরুষ বানররা নারী বানরের চাইতে আকারে বড় হয়। গড়ে পুরুষরা লম্বায় প্রায় ২৮ ইঞ্চি বা ৭২ সে.মি. পর্যন্ত হতে পারে। লেজ হতে পারে ৭৫ সে.মি. লম্বা এবং ওজন হতে পারে ২৪ কে.জি. (৫৩ পাউন্ড)। নারীরা হতে পারে ৬০ সে.মি. লম্বা এবং ১২ কে.জি. (২৬ পাউন্ড)।
এরা একবারে একটা বাচ্চার জন্ম দেয়। তাদের গর্ভধারণকাল ১৬৬ দিন। শিশুর মুখের রঙ গাঢ় নীল রঙ এবং শরীরের রঙ কাল হয়। বয়স ৩-৪ মাস হলে এই রঙ পরিবর্তন হয়ে বাদামী রঙের হয়ে যায়। মায়ের সাথে শিশু ১ বৎসর পর্যন্ত থাকে। এরা প্রায় ২০ বৎসর পর্যন্ত বাঁচে।
প্রবোসিস বানর মানুষকে এড়িয়ে চলে। বর্তমানে জনসংখ্যা বৃদ্ধি সহ বনের মধ্যে মানুষের যাতায়াত বৃদ্ধির ফলে এদের সংখ্য ধীরে ধীরে কমে যাচ্ছে। এদের প্রধান শত্রু মানুষ এবং ধূসর চিতাবাঘ। নদীর কুমিররাও এদের শত্রু। নদীতে সাধারণত প্রবোসিস বানররা নামে না। কিন্তু চিতাবাঘের আক্রমণ থেকে বাচার জন্য যখন এরা নদীতে নামে তখন এত সাবধানে নদীতে সাতরায় যে জলে কোন আলোড়নের সৃষ্টি হয় না। কুমিরের হাত থেকে বাঁচার জন্য এরা খুব সাবধানে সাতার কাটতে পারে। এরা সাধারণত দলবদ্ধভাবে নদীতে নামে। যদি কোন বানর কুমিরের আক্রমণের শিকার হয় তাহলে সবাই মিলে জলের মধ্যে লাফালাফি শুরু করে। ফলে কুমির ভয় পেয়ে যায়।
এরা নিজের খাবার নিজে সংগ্রহ করে খেতে পছন্দ করে। এরা বন্দী অবস্থায় খাদ্য গ্রহণ করে না। তাই এদেরকে চিড়িয়াখানায় দেখা যায় না। তবে এদের সংখ্যা আশংকাজনকভাবে কমে যাওয়ার কারণে সিঙ্গাপুর এবং অস্ট্রেলিয়ার চিড়িয়াখানা এদেরকে লালন করার পরিকল্পনা করছে।

সোনালী সিংহ ট্যামারিন

Golden Lion Tamarin বা সোনালী সিংহ ট্যামারিন হচ্ছে New World monkey পরিবারের এক ধরনের ছোট প্রজাতির বানর। এরা Marmoset বা Golden Marmoset নামে পরিচিত। স্থানীয়ভাবে mico-leão নামে ডাকা হয়। এদের বাস দক্ষিণ মধ্য আমেরিকার কোস্টারিকা থেকে দক্ষিণ আমেরিকা পর্যন্ত। আমাজন নদীর মোহনা এবং বলিভিয়ার উত্তরাঞ্চল পর্যন্ত এদের দেখা যায়। এদের গায়ের রঙ বিভিন্ন রঙের হতে পারে।

কালো, গাঢ় কালো, কালোর বিভিন্ন মিশ্রণ, বাদামী ও সাদা বিভিন্ন রঙের ট্যামারিন দেখা গেছে। বিভিন্ন প্রজাতির লম্বা লম্বা গোঁফ আছে। ট্যামারিন গোষ্ঠির সবচেয়ে আকর্ষণীয় প্রজাতি হল সোনালী সিংহ ট্যামারি।এই ট্যামারিনের সমস্ত গায়ে হালকা কমলা থেকে সোনালী রঙের লোম রয়েছে। মাথার গাঢ় সোনালী চুলগুলো বেশ লম্বা। পায়ে গাছের ডাল আঁকড়ে ধরার উপযোগী লম্বা শক্ত নখ রয়েছে। সিংহের মত গলাভরা কেশর আছে বলে এদেরকে সিংহ ট্যামারিন বলা হয়।
কাঠবেড়ালীর চেয়ে একটু বড় এই ট্যামারিনদের শরীরের আকার প্রায় ৩৩৫ মিলিমিটার (১৩.২ ইঞ্চি) লম্বা আর বাহারী লেজটা লম্বায় ৪০০ মি.মি. (১৬ ইঞ্চি)। পুরুষরা ওজনে প্রায় ৭০০ গ্রাম। বন্য অবস্থায় অবস্থায় অবশ্য এর চাইতে বেশি ওজনের ট্যামারিন পাওয়া গেছে। সাধারণত স্ত্রী ট্যামারিন ওজনে ৫৫০ গ্রাম হয়, কিন্তু গর্ভবতীদের ওজন ৭৯০ গ্রাম পর্যন্ত হয়ে থাকে।

বর্তমানে একমাত্র ব্রাজিলের রিও ডি জেনেরিও (Rio de Janeiro) প্রদেশের এক সংরক্ষিত বনভূমিতে এদেরকে প্রাকৃতিক অবস্থায় দেখতে পাওয়া যায়। এরা প্রথম বিপন্ন হিসেবে ১৯৮২ সালে তালিকাভূক্ত হয়। ১৯৯৬ সালের দিকে এরা আশংকাজনকভাবে বিলুপ্তপ্রায় অবস্থায় পৌঁছে যায়। একসময় আটলান্টিকের পূর্ব উপকূল থেকে দক্ষিণ আমেরিকার মধ্যদেশ পর্যন্ত চষে বেড়াত। এই এলাকার বিস্তীর্ণ বনাঞ্চল ছিল এদের বাসস্থান। কিন্তু নির্বিচার গাছ কাটার ফলে এদের বিচরণক্ষেত্র কমে গেছে। কৃষি ও মানুষের বাসস্থানের জন্য তাদের প্রিয় বাসভূমির ৯০% ভাগেরও বেশি এলাকার গাছ কেটে ফেলা হয়েছে। বর্তমানে এদের প্রাকৃতিক বাসভূমির মাত্র ২% ভাগ অবশিষ্ট আছে।
এরা সাধারণতঃ সর্বভূক। ফল, গাছের শরীরের বিভিন্ন অংশ, ফুল, মাকড়সা, পোকা, গিরগিটি, ছোট ছোট প্রাণী, পাখির ডিম কোন কিছুতে এদের অরুচি নেই। এরা যে বুদ্ধিমান তা এদের খাদ্য সংগ্রহের আর একটি বিশেষ ঘটনা দেখে বোঝা যায়। এরা গাছের শরীরে লম্বা নখ দিয়ে আঁচড় কাটে। এই ক্ষতস্থান দিয়ে ঝরে পরা রস এবং আঠা এরা পরমানন্দে খাবার হিসেবে গ্রহণ করে। একটা মজার বিষয় পর্যবেক্ষণে লক্ষ করা গেছে। এক এক প্রজাতির ট্যামারিন তাদের খাদ্যাভাসের বৈচিত্র্যের কারণে নির্দিষ্ট এক জায়গায় বাস করে। তাই একটি নির্দিষ্ট এলাকায় একটি নির্দিষ্ট প্রজাতির ট্যামারিন বাস করে। কোন একটি জায়গায় একটির বেশি প্রজাতিকে একত্রে দেখতে পাওয়া যায় না।
ঈগল, সাপ, জাগুয়ার সহ বিভিন্ন মাংশাসী প্রাণী এদের অন্যতম শত্রু।
ট্যামারিনরা উঁচু উঁচু গাছের মাথায় বাস করতে পছন্দ করে। সূর্যের প্রখর তাপের প্রতি এরা খুব সংবেদনশীল, তাই সূর্যের আলো থেকে রক্ষা পাওয়ার জন্য এরা ঘন হয়ে জন্মানো পাতার আড়ালে বসে বিশ্রাম নেয়। এরা দলবদ্ধভাবে বাস করে। এক একটা দলে ৪ থেকে ১৫ জনকে দেখা যায়। এক একটা দল ২৫ থেকে ১০০ একর পর্যন্ত জায়গায় নিজেদের খাদ্য খুঁজে বেড়ায়। পরস্পরের মধ্যে বিভিন্ন রকম শব্দ করে এরা পারস্পরিক যোগাযোগ রক্ষা করে। এরা সাধারণত আক্রমণাত্মক নয়।
বনের ছোট ছোট জলাশয়ে ভেসে বেড়ানো পোকা খাওয়ার জন্য এরা মাটিতে নামে। সারাদিন এরা খাবারের সন্ধানে নিজেদের এলাকায় ঘুরে বেড়ায়। সন্ধ্যা নামার সাথে সাথে নিজের বাসায় ফেরে। বড় বড় গাছের ভাঙা কোটরে এরা বাস করে। শরীর থেকে ঝরে পড়া অসংখ্য লোম কোটরের ভিতরটা মোড়ানো থাকে।
লায়ন ট্যামারিনের পূর্ণবয়স্ক হতে লাগে ২ থেকে ৩ বৎসর। পুরুষ প্রজাতি প্রজননক্ষম হয় ১২-১৮ মাসের মধ্যে। কিন্তু নারীরা ২৪ মাসের আগে প্রজননক্ষম হয় না। সেপ্টেম্বর থেকে মার্চ মাস এদের প্রজনন ঋতু। ১২৬ থেকে ১৩০ দিনের গর্ভধারণ শেষে এরা একসাথে দুইটা বাচ্চার জন্ম দেয় (বেশিরভাগ সময়)। বৎসরে দুইবার এরা দুইটি করে বাচ্চা প্রসব করে। ৯০ দিনের মধ্যে শাবকরা নিজে নিজে খাদ্য গ্রহণে সক্ষম হয়ে ওঠে। জন্মের তিন সপ্তাহ পর থেকে বাচ্চা ট্যামারিনের লালন পালনের ভার পুরুষের উপর বর্তায়।
সাধারণত এদের আয়ু ৮-১৫ বৎসর। তবে চিড়িয়াখানায় এদেরকে ১৮-২৪ বৎসর পর্যন্ত বাঁচতে দেখা গেছে।