Animals Life in Bengali Description

বুনো খরগোশ

No comments
অতিনিরীহ, ভীতু, বোকা ও অকারণে উত্তেজনায় ভোগা সুন্দর এক প্রাণী হলো বুনো খরগোশ। লম্বা-সুদর্শন কান, টলটলে মায়াবী দুটি চোখ। লম্বা দুই কানে এরা চমৎকার কানতালি বাজাতে পারে। দারুণ লম্ফবিদ। এমনকি লাফ দিয়ে দু-তিন হাত উঁচু বাধা টপকে যেতে পারে অনায়াসে। মানুষ বা কুকুরের ধাওয়া খেলে এরা দৌড়ে গিয়ে কোনো ঝোপঝাড়ে মাথা গুঁজে দিয়ে ভাবে—দেখবে না শত্রুরা। শরীরের পেছন দিকটা পড়ে যায় শত্রুর কবলে। ধরা পড়লে এরা চেঁচায়, হাত-পা ছোড়ে, কামড়ে দেওয়ার চেষ্টা করে। চোখ বেয়ে কখনো কখনো জল গড়ায়, হয়তো বা কাঁদে। দ্রুতগামী খরগোশের মাথায় যদি একটা ছোট্ট ঢিলও আঘাত করে, লুটিয়ে পড়ে, মারা যায় সঙ্গে সঙ্গে।
সারা দেশেই এরা ছিল বহাল তবিয়তে, অন্তত ১৯৭০ সাল পর্যন্ত। আমার বাল্য-কৈশোরে বাগেরহাটের ফকিরহাটে আমার গ্রামেও ছিল। আমাদের গ্রামের কেউ কেউ জাল পেতে এসব বুনো খরগোশ শিকার করত। খড়বন, কাশ-ঘাসবন, পানের বরজ, খোলা মাঠের উঁচু জায়গার ঝোপঝাড় ও গ্রামীণ বাগানের কিনারের ঝোপঝাড় এদের প্রিয় আবাসস্থল। অল্প জায়গায় আত্মগোপনে পারদর্শী এরা। আখখেত এদের অতিপ্রিয় আবাসভূমি। কুষ্টিয়ার আখমহলে আজও এরা আছে, ছানা তোলে। আছে বৃহত্তর সিলেট-চট্টগ্রামে। সিলেটের চা-বাগানগুলোতেও মাঝে মাঝে দেখা মেলে এদের।
খরগোশের দুর্দশার কারণ—শিকার, শুধুই শিকার। গ্রামবাংলায় অকারণে খেলার ছলে কুকুর দিয়ে নিধন। সিলেটের বহু আদিবাসী এদের মাংস খায়। নিশাচর এ প্রাণীর মল অনেকটাই ছাগলের লাদির মতো। ওই ছোট ছোট লাদি ও পায়ের ছাপ দেখে ওদের আস্তানা বের করা সহজ। অতএব, গ্রামবাংলায় আজ আর ওরা নেই-ই বলতে গেলে। যশোর থেকে শুরু করে ঝিনাইদহ-কুষ্টিয়া-মাগুরায় এখনো টিকে আছে সামান্য কিছু।
আমার গ্রামে কখনো পানের বরজে দেখা মিললেও তিষ্ঠাতে পারে না মোটেও। উত্তরবঙ্গে একসময় প্রচুর সংখ্যায় ছিল। বুনো খরগোশের বৈজ্ঞানিক নাম Lepus nigricollis। মাপ লেজসহ ৫৫ সেন্টিমিটার। বাগেরহাটে এদের বলা হয় লাফা।
খাদ্য তালিকায় মটরশুঁটি, কচি ঘাসপাতা, বাঁশের কোড়ল ইত্যাদি। শীতে ঝোপের ভেতর বাসামতো করে বাচ্চা তোলে। দুটি বাচ্চা হয়। এরাও বিড়ালের মতো বাচ্চা সরিয়ে নিতে পারে। জন্মের এক দিনের ভেতর বাচ্চারা চলতে শেখে। দুধ পান করে। এক মাস বয়সে ঘাসপাতা খেতে পারে। ছয় মাসে বয়ঃপ্রাপ্ত হয়। মানুষ ছাড়াও খরগোশের মাংস খায় মেছোবাঘ-অজগর-বনবিড়াল-শিয়াল-খাটাশরা। এসব কারণেই এরা আজ অতিবিপন্ন।

শরীফ খান | প্রথম আলো

No comments :

Post a Comment