লরিস
শ্রীলঙ্কা এবং দক্ষিণ ভারতের বৃষ্টিপ্রধান ক্রান্তীয় বনাঞ্চলে এক সময় দেখা মিলত অদ্ভুত রহস্যময় স্তন্যপায়ী ও নিশাচর প্রাণী 'লরিস'। অনেক বছর ধরে প্রাণীটির কোনো সন্ধান ছিল না। ধারণা করা হয়, আজ থেকে প্রায় ৬০ বছর আগে এটি পৃথিবী থেকে বিলুপ্ত হয়ে যায়। কিন্তু অবিশ্বাস্যভাবে এবং হঠাৎ করেই বিজ্ঞানীরা এই হারিয়ে যাওয়া প্রাণীটির সন্ধান পেয়ে বিরাট এক আশার আলো দেখছেন। সম্প্রতি গবেষকরা প্রায় এক হাজার রাত অপেক্ষা করে শ্রীলঙ্কার ১২০টি বন্য এলাকায় অনুসন্ধান চালিয়ে এই হারিয়ে যাওয়া রহস্যময় প্রাণীটির সন্ধান পেয়েছেন। মধ্য শ্রীলঙ্কার হার্টন প্লেইনস ন্যাশনাল পার্কে এ প্রাণীটির আকস্মিক দেখা মিলে এবং এখানেই প্রথমে এর আলোকচিত্র ধারণ করা হয়। শিকারীর আক্রমণ থেকে দ্রুত পালাতে ঘন ও কাঁটাযুক্ত গাছপালার গ্রীষ্মমণ্ডলীয় বনাঞ্চল ছিল এদের উপযোগী আবাস। সম্প্রতি আকস্মিকভাবে এই প্রাণীটির দেখা মিললেও বেশকিছু গবেষক মন্তব্য করেছেন, ২০০২ সালে হঠাৎ একবার চলমান এই প্রাণীটির জ্বলজ্বলে চোখের ঝিলিক দেখা গিয়েছিল এক বনে। ১৯৩৭ থেকে ২০০২ সাল পর্যন্ত আকস্মিকভাবে দু'একবার লরিস নামের এই প্রাণীটির দেখা মিললেও ২০০২ সালের পর এটিকে আর কখনও দেখা যায়নি। আর তখন থেকেই বিজ্ঞানীরা দৃঢ়ভাবে আশা করে আসছিলেন এই প্রাণীটির অস্তিত্ব এখনও পুরোপুরি বিলুপ্ত হয়ে যায়নি। প্রাণিবিজ্ঞানীদের মতে, ব্রিটিশ উপনিবেশের সময় চা চাষের জন্য ব্যাপক হারে বনাঞ্চল ধ্বংস করা হলে এ প্রজাতির বিলুপ্তি ঘটে। রহস্যময় ও নিশাচর এই প্রাণীটি হারিয়ে যাওয়ার ব্যাপারে বিজ্ঞানীরা অনেক বছর ধরেই তাদের গবেষণা ও অনুসন্ধানের ব্যাপারে চেষ্টা চালিয়ে আসছিলেন। দীর্ঘদিনের অক্লান্ত পরিশ্রম ও চেষ্টায় এই বিলুপ্তপ্রায় প্রাণীটির হঠাৎ এভাবে দেখা পাওয়ায় তারা যেন গবেষণার ব্যাপারে আবার নতুন করে উৎসাহ পাচ্ছেন। লন্ডনের জুলজিক্যাল সোসাইটির সঙ্গে শ্রীলঙ্কার কলম্বো ইউনিভার্সিটি এবং ওপেন ইউনিভার্সিটির গবেষকরা সম্মিলিতভাবে এই প্রাণীটির ব্যাপারে ব্যাপক গবেষণা চালিয়েছেন।জাতিসংঘের পরিবেশ প্রকল্পের গবেষকদের দেওয়া এক প্রতিবেদনে উল্লেখ করা হয়, গত ৪০ বছরে বিশ্বের মোট প্রাণীর সংখ্যা শতকরা ৩০ ভাগ হ্রাস পেয়েছে। তাছাড়া ম্যানগ্রোভ এবং সামুদ্রিক ঘাসের অধিকৃত জায়গার পরিমাণ ২০ ভাগ এবং জীবন্ত প্রবালের পরিমাণও ৪০ ভাগ কমে গেছে। এই হতাশা ও নৈরাশ্যময় ঘোষণার পর ২০০২ সালে বিশ্ব নেতারা কথা দিয়েছিলেন এবং প্রতিজ্ঞা করেছিলেন, যেভাবেই হোক ২০১০ সালের মধ্যে সমগ্র বিশ্ব থেকে জীববৈচিত্র্যের হ্রাস অবস্থার উত্তরণ ঘটানো হবে। বিশ্ব নেতাদের শপথমাখা সেই কথা হয়তো এবার বাস্তবায়িত হতে যাচ্ছে। কারণ সন্ধান পাওয়া এই রহস্যময় প্রাণী 'স্লেন্দার লরিস' বর্তমানে বিশ্বের প্রধান পাঁচটি বিলুপ্তপ্রায় স্তন্যপায়ী প্রাণীর তালিকার মধ্যে একটি।
-প্রদীপ সাহা
Subscribe to:
Post Comments
(
Atom
)
No comments :
Post a Comment