ঢোল
এশীয় বন্য কুকুর, ভারতীয় বন্য কুকুর বা লাল কুকুর নামেও ঢোল (Dhole) বিখ্যাত। অবশ্য কেউ কেউ এদের ‘রামকুত্তা’, ‘বনকুত্তা’ (Asiatic Wild Dog/Red Dog)নামেও ডাকে। বৈজ্ঞানিক নাম Cuon alpinus অর্থাৎ পাহাড়ি কুকুর। ১০টি জানা উপপ্রজাতির মধ্যে এ দেশে Cuon alpinus dukhunensis-এর দেখা মেলে।এরা শিয়াল, কুকুর ও নেকড়ের জাতভাই। তবে চেহারায় শিয়ালের সঙ্গেই মিল বেশি। গায়ের রঙ লালচে। বনকুকুর আকারে নেকড়ে ও শিয়ালের মাঝামাঝি। লম্বায় ৪৫-৬০ সেন্টিমিটার, লেজ ২০-২৭ সেন্টিমিটার। ওজন ১০-২০ কেজি। পা খাটো। লেজ ঝোপালো ও নাকের ওপরের অংশ খানিকটা উঁচু। মাথা ও দেহের ওপরের অংশের লোম বাদামি-লাল। ঋতুভেদে রং হালকা থেকে গাঢ় হতে পারে। কানের ভেতর, মুখের নিচ, গলা ও দেহের নিচের অংশের রং সাদা। ঝোপালো লেজের ডগা কালো।
বনকুকুর সামাজিক প্রাণী। দলবদ্ধভাবে থাকে; দিনের বেলা শিকার করে। দলে ২-৩০টি পর্যন্ত বনকুকুর থাকতে পারে। ঢোল চতুর শিকারী, দ্রুত দৌড়াতেও পারদর্শী। এরা সাধারণত মাঝারি আকারের প্রাণী, যেমন—হরিণ, শূকর, ছাগল এসবকে আক্রমণ করে। কাঠবিড়াল, পান্ডা, বানর ইত্যাদি ছোট প্রাণী ঢোলের লক্ষ্যবস্তু। প্রয়োজনে বনগরু বা মহিষের মতো বড় পশুকেও আক্রমণ করতে পারে। বনকুকুরের দল কোনো প্রাণীকে সামনে ও পেছনে উভয় দিক থেকেই আক্রমণ করে এবং তাড়িয়ে নিয়ে যায়। তাড়াতে তাড়াতে ক্লান্ত করে ফেলে। তাড়ানো অবস্থাতেই জীবিত প্রাণীটিকে খুবলে খেতে থাকে। এভাবে ১০-১৫টি বনকুকুর মিলে অল্প সময়ের মধ্যেই যেকোনো প্রাণীকে সাবাড় করে ফেলতে পারে। এরা ভালুক, চিতাবাঘ বা বাঘকে এড়িয়ে চলে; তবে আক্রান্ত হলে তাদেরও রেহাই নেই। খাদ্যস্বল্পতার সময় ফল ও সরীসৃপ খেয়েও বাঁচতে পারে। এরা কুকুরের মতো ঘেউ ঘেউ করে না, বরং হুইসেল বা শিস দেওয়ার মতো করে শব্দ করে।
বনকুকুর মাটিতে গর্ত খুঁড়ে বা পাহাড়ের গুহায় বাস করে। সেপ্টেম্বর-ফেব্রুয়ারি প্রজননকাল। স্ত্রী বনকুকুর ৬০-৬৫ দিন গর্ভধারণের পর গর্তে বা গুহায় চার থেকে ছয়টি বাচ্চা দেয়। বাচ্চা পালনে দলের অন্য সদস্যরাও সাহায্য করে। বাচ্চারা এক বছরে পূর্ণবয়স্ক হয়। এরা ১০ বছর পর্যন্ত বাঁচতে পারে।
হিমালয় অঞ্চলে এদের সংখ্যা চোখে পড়ার মতো। হিম-আবহাওয়ায় এরা দিব্যি নিজেদেরকে মানিয়ে নিয়েছে। পূর্ব ও দক্ষিণ এশিয়া থেকে শুরু করে রাশিয়া ও সুমাত্রা পর্যন্ত বিস্তৃত ছিল এদের বিচরণ। বর্তমানে এই প্রজাতির কুকুর অস্তিত্ব সঙ্কটে রয়েছে। পৃথিবীতে ঢোলের সংখ্যা এখন মাত্র ২ হাজার।
এ দেশে চট্টগ্রাম, পার্বত্য চট্টগ্রাম ও সিলেটের গহিন বনে বাস করলেও এদের অস্তিত্বের বিষয়টি আন্তর্জাতিক মহলে প্রশ্নবিদ্ধ। তবে বিভিন্ন সূত্রমতে, এ দেশে এখনো এরা টিকে আছে। কাসালং ও সাঙ্গু সংরক্ষিত বনে এদের পদচিহ্ন পাওয়া গেছে।
তথ্যউৎসঃ আ ন ম আমিনুর রহমান ০০ প্রথম আলো
Subscribe to:
Post Comments
(
Atom
)
No comments :
Post a Comment