রক্তচোষা
নামটা বেশ ভয়ংকর মনে হোলেও রক্তচোষা মোটেও কার রক্ত চুষে খায় না । এরা কোন কিছুকে ভয় পেলে বা ভয় দেখাতে মাথা , ঘার , গলা রক্তের মত লালবর্ণ ধারণ করে । তাই দেখে আমরা ছোটবেলায় মনে করতাম দূর থেকে আমাদের রক্ত চুষে নিচ্ছে রক্তচোষা । হাতের কেনি আঙ্গুল মুখে নিয়ে আমরাও চোষা শুরু করতাম দিগুণ শক্তি নিয়ে, রক্ত ফিরিয়ে আনার আশায় । দূর থেকে রক্তচোষা যখন মনে করত কোন বিপদ নেই , আস্তে আস্তে তার গায়ের রঙ স্বাভাবিক হয়ে যেত ফলে আমরা মনে করতাম রক্তচোষা আমাদের কাছে হেরে গেছে । আমরা রক্ত ফিরিয়ে আনতে পেরেছি ।
সরীসৃপ জাতিয় এই প্রাণীটি দেখতে টিকটিকির মত , এর শরীর খশখশে ছোট বাদামী-ধূসর আঁশে আবৃত । প্রয়োজনে এই আশের রঙ, রক্তচোষা সাময়িক ভাবে পরিবর্তন করে লালবর্ণ করতে পারে । স্ত্রী রক্তচোষার গায়ের রঙ ধূসর বেশী । পেটের পাশ দিয়ে হলদে বাদামী রেখার-মত আছে । রক্তচোষার দেহের মাপ ১২ সেমি । লেজ দেহের আকারের চেয়ে অনেক বড় ৩২ সেমি হয় ।
রক্তচোষা ঝোপঝাড় , বাগান , খোলা-মাঠ , পুড়ন দালানকোঠায় ও বনে বাস করে । শীতকালে এদের ঝোপঝাড়ের ডালের উপর লম্বা হয়ে শুয়ে রোদ পোহাতে দেখা যায় । রক্তচোষা পোকামাকড় , পোকামাকড়ের ডিম খায় । এদের শিকারের পদ্ধতি অদ্ভুত । এরা পোকার গায়ে মুখের মধ্যে গুছিয়ে রাখা জিহ্বা ছুড়ে মারে , জিহ্বার ডগায় আঠাল অংশে পোকা আটকে গেলে অমনি মুখের ভিতরে নিয়ে আসে । যা হয় মাত্র সেকেন্ডের মধ্যাই । রক্তচোষা দ্রুত চলাফেরা করতে পারে। এক গাছ থেকে অন্য গাছের দালে লাফিয়ে যেতে পারে , এমনকি পানির উপর দ্রুত দৌড় দিয়ে পাড় হতে পারে । এপ্রিল থেকে সেপ্টেম্বর এরেদ প্রজনন মৌসুম । এ সময় পুরুষ রক্তচোষা টেরাটরিয়াল হয়ে ওঠে । নিজ এলাকায় কোন পুরুষ রক্তচোষাকে প্রবেশ করতে দেয়না । এলেই যুদ্ধ । স্ত্রী রক্তচোষা ৬ থেকে ২৫ টি পর্যন্ত ডিম দিয়ে থাকে ।
বদলোক বা বদশাসশক কে আমরা অনেক সময় রক্তচোষা বলি । কিন্তু এই প্রাণীটির নাম রক্তচোষা হলেও এরা আমাদের প্রকৃতি ও পরিবেশের জন্য অত্যন্ত উপকারী প্রাণী সেই সাথে আমাদের কৃষিতেও এর অবদান অপরিসীম। ফসলের ক্ষতিকারক পোকামাকড় খেঁক রক্তচোষা নিরাপদে নেই আমাদের রক্তচোষা কর্মকাণ্ড থেকে । নিজ প্রয়োজনে আমরা নির্বিচারে ধ্বংস করছি নিরীহ রক্তচোষাদের আবাস । ঝুঁকিপূর্ণ করে তুলেছি সমগ্র প্রাণ প্রকৃতিকে ।
লেখা – ঋজু আজম
ছবি – টিটু ভাই ও ইন্টারনেট
Subscribe to:
Post Comments
(
Atom
)
No comments :
Post a Comment