ঘোড়া
প্রায় পাঁচ হাজার বছর আগে মানুষ প্রথম ঘোড়াকে নিজেদের কাজে লাগাতে শুরু করে। তারপর থেকে আজ পর্যন্ত ঘোড়াকে বিভিন্ন জাতের মধ্যে মিশ্রণ ঘটিয়ে মানুষ চেষ্টা করেছে নতুন জাতের উদ্ভাবন করতে। আর মানুষ তা পেরেছেও। কমপক্ষে এমন ১৫০টি শঙ্কর প্রজাতির ঘোড়া আছে ঘোড়া পরিবারে। একেবারে লিলিপুট ফালাবেল্লা প্রজাতি থেকে (৩০ ইঞ্চি) উচ্চতা শুরু করে বিশাল দেহী শায়ার (৭২ ইঞ্চি লম্বা) জাতের ঘোড়াও আপনি দেখতে পাবেন। আর এই শঙ্কর জাতের ঘোড়াগুলোকে আমরা প্রয়োজন মতো বিভিন্ন কাজে লাগাচ্ছি।ঘোড়াদের ব্রিডিং নির্ভর করে সাধারণত দুটি প্রয়োজনের ওপর। হালকা শরীরের ঘোড়াগুলোর প্রজনন ঘটানো হয় 'হর্স রাইডিং'-এর জন্য। আর বিশালদেহী ঘোড়াদের ব্যবহার করা হয় ভারী বোঝা টানার জন্য। এদের বলা হয় 'ড্রাফট'। 'গ্রেট হর্স' পরিবারভুক্ত প্রজাতির ঘোড়া। একদা বর্ম পরা অস্ত্রশস্ত্রে সজ্জিত নাইটরা গ্রেট হর্সদের ব্যবহার করতেন যুদ্ধক্ষেত্রে। কিন্তু 'ড্রাফট' ঘোড়াদের তখন জমিতে লাঙল টানার কাজে ব্যবহার করা হয়। তবে সার্কাস বা প্যারেড শো'তে এদের দেখা মেলে বেশি। মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রে কমপক্ষে ৬০ লাখ ঘোড়ার বাস। এর ভেতর সবচেয়ে জনপ্রিয় ঘোড়া হলো 'কোয়ার্টার হর্স'। ভারী কাজে এখন যন্ত্রের ব্যবহার বেড়ে গেলেও ঘোড়ারা কিন্তু এখনো সঙ্গী হিসেবে মানুষের সবচেয়ে প্রিয়। তবে ঘোড়া দেখে অনেকের পক্ষেই কিন্তু ঘোড়ার জাত বোঝা সম্ভব হয় না। আসুন এ ব্যাপারে কিছু তথ্য জেনে নেওয়া যাক :
প্রেজেওয়ালস্কি হর্স :
এশিয়ার সব পোষমানা ঘোড়ার ঠাকুরদা বলা হয় এই বুনো জাতের ঘোড়াটিকে। জঙ্গলে এখন এদের বিচরণ নেই। তবে গেম পার্ক এবং চিড়িয়াখানায় এদের দেখা মেলে।
মাসটাং :
এক সময় আমেরিকার পশ্চিমে এই বুনো ঘোড়াদের যত্রতত্র বিচরণ ছিল। এদের পূর্বপুরুষ একদা বন্দী হয় মানুষের হাতে। তারপর এরা হয় বন্দীদশা থেকে মুক্তি পেয়ে বা পালিয়ে অনেকেই আবার চলে যায় জঙ্গলে। মাসটাংরা এদেরই বংশধর। একদা হাজার হাজার মাসটাংদের বিচরণ দেখা যেত আমেরিকার পশ্চিমাঞ্চলে। এখন সরকারি প্রটেকশনের আড়ালে মাত্র ৪০ হাজার মাসটাং ঘোড়া আছে মুক্ত অবস্থায়।
বারো :
বারোদের চেহারা গাধার মতো বলেই হয়তো এগুলোকে গাধা বলেও ডাকা হয়। আসলে এরা ঘোড়া পরিবারের অন্তর্ভুক্ত। তবে বারোদের কান লম্বা এবং কেশর খাটো। আমেরিকার পশ্চিমাঞ্চলে পাঁচ হাজার বুনো বারোর বাস। মাসটাংদের মতো এরাও পোষ না মানা প্রজাতি। পুরুষ বারোর সঙ্গে যখন অন্য কোনো প্রজাতির মেয়ে ঘোড়ার প্রজনন হয়, তখন জন্ম নেয় যে প্রাণীটি, তার নামই খচ্চর।
আরবি ঘোড়া :
মানুষ কর্তৃক সবচেয়ে প্রাচীন শঙ্কর ঘোড়া হলো আরবি ঘোড়া। মরুভূমিতে বাসে অভ্যস্ত দেবুইনরা চার হাজার বছরেরও আগে প্রথম অ্যারাবিয়ান ঘোড়ার প্রজনন করে। এ গোড়ার সহ্যশক্তি যেমন প্রবল, দৌড়াতেও পারে তেমনি। অনেকেই সবচেয়ে সুন্দর ঘোড়া বলে অ্যারাবিয়ান ঘোড়াকে অভিহিত করেছেন।
লিপবিজেনার:
এদের মতো সুন্দর জাতের ঘোড়া বোধহয় পৃথিবীতে আর একটিও নেই। সার্কাস বা ভিয়েনার স্ক্যাটিং রাইডিং স্কুলে এদের সবচেয়ে বেশি দেখা মেলে। পূর্ণবয়স্ক ঘোড়াগুলো হয়ে থাকে ধবধবে সাদা বা হালকা ধূসর রংয়ের। জন্মের সময় শিশু ঘোড়ার গায়ের রং গাঢ় বাদামি হলেও কয়েক বছরের মধ্যে পাল্টে যায় রং।
মর্গান:
১৭৮৯ সালে আমেরিকায় প্রথম মর্গান ঘোড়ার প্রজনন ঘটানো হয়। শক্তিশালী এ গোড়াগুলো খামারের নানা ভারী জিনিসসহ স্ট্রিটকারগুলো পর্যন্ত টেনে নিতে পারদর্শী ছিল। এদের আমেরিকান সেনাবাহিনীতেও কাজে লাগানো হতো। মর্গান ঘোড়ায় চড়ে পাহাড়ে পুলিশ এখনো পাহারা দেয়। 'শো হর্স' হিসেবে এ প্রজাতির ঘোড়া খুবই চমৎকার, পোষা প্রাণী হিসেবেও এদের তুলনা মেলা ভার।
কোয়ার্টার হর্স:
আমেরিকায় যখন উপনিবেশ ছিল, তখন গ্রামের রাস্তাগুলো লম্বায় সাধারণত কোয়ার্টার মাইলের মতো ছিল। এসব রাস্তায় তখন ঘোড়া দৌড়ের প্রতিযোগিতা হতো। আর যেসব ঘোড়া দৌড়াত সেগুলোর নাম হয়ে গিয়েছিল কোয়ার্টার হর্স। কোয়ার্টার হর্সদের প্রধান বৈশিষ্ট্য_ এরা স্টার্টিং পয়েন্ট থেকে প্রকাণ্ড লাফ মেরে দৌড় শুরু করতে পারত, বিদ্যুৎবেগে মোড় ঘুরে হঠাৎ থেমেও যেত। এসব দেখার মতোই দৃশ্য ছিল বটে। গরু বা মোষের পালের আগে আগে থাকত এ জাতের ঘোড়া। রাখালরা কোয়ার্টার হর্সের পিঠে চড়ে দলছুট গরু বা মোষদের বাগে আনতে পারত। কোয়ার্টার হর্সদের মেজাজ-মর্জি বেজায় ঠাণ্ডা বলে এদের কিত-ব্রোক হর্সও বলা হয়। আমেরিকায় বর্তমানে প্রায় পঁচিশ লাখের মতো কোয়ার্টার হর্স আছে। সে দেশে সবচেয়ে বেশি প্রজনন ঘটানো হয় এ জাতের ঘোড়ার।
শায়ার:
ঘোড়াদের মধ্যে সবচেয়ে বৃহৎ আকৃতির ঘোড়া হলো শায়ার। এদের ওজন প্রায় এক টনের কাছাকাছি। সাংঘাতিক শক্তিশালী এ ঘোড়া। ষাঁড় এবং হাতির মতোই শক্তিশালী, মাল বইতেও ওস্তাদ এরা।
ক্লাইডেলডেল:
ক্লাইডেলডেল ঘোড়াকে বিভিন্ন প্রতিযোগিতা, প্যারেড বা টিভি বিজ্ঞাপনে প্রায়ই ব্যবহার করা হয়। যুক্তরাষ্ট্রের সর্বাধিক 'ড্রাফট ব্রিডিং' ঘোড়া হলো এরা।
অ্যাপালুসা:
আমেরিকার বেশিরভাগ ইন্ডিয়ানই ঘোড়ার প্রজনন ঘটায় না, শুধু নেজ পার্সে উপজাতি বাদে। তারা এক ধরনের ঘোড়ার প্রজনন ঘটিয়েছে 'অ্যাপালুসা' নামে। এ ঘোড়ার গায়ের রং সাদা, কোনোটিবা গাঢ় কোনো রংয়ের। তবে এদের শরীরে বিভিন্ন গাঢ় রংয়ের ফুটকিও দেখা যায়।
শামীম শিকদার
Subscribe to:
Post Comments
(
Atom
)
No comments :
Post a Comment