রয়েল বেঙ্গল টাইগার
বাংলাদেশের দক্ষিণ-পশ্চিম কোণজুড়ে যেন এক সবুজ ভাসমান গালিচা হয়ে বিছিয়ে আছে সুন্দরবন। এটি পৃথিবীর বৃহত্তম ম্যানগ্রোভ ফরেস্ট। এই বনের বুকে প্রতিনিয়ত চলে সাগরের জোয়ার-ভাটার খেলা। তাই বনের মাটি সর্বদাই থাকে কর্দমাক্ত। এই জঙ্গল যেমন অন্যান্য অরণ্য থেকে ভিন্ন, তেমনি এখানে বসবাসকারী বণ্যপ্রাণীদের আচরণও কিছুটা ভিন্ন। সুন্দরবনের রাজা রয়েল বেঙ্গল টাইগারের কথাই ধরা যাক। বিড়াল গোত্রের প্রাণীরা সাধারণত পানি এড়িয়ে চলে। পাহাড়ি জঙ্গল আর শালবনের বাঘ কালেভদ্রে পানিতে নামে। কিন্তু সুন্দরবনের বাঘকে প্রতিনিয়ত স্বজাতীয় এই নিয়ম ভঙ্গ করতে হয়। এর কারণ, সুন্দরবনের পরিবেশ। প্রায় ২ হাজার ৪০০ বর্গমাইল আয়তনের এই বনে রয়েছে চারশ'রও বেশি নদী ও কয়েক হাজার ছোট বড় খাল। একটি বাঘের নিয়মিত বিচরণ ক্ষেত্রের আয়তন হচ্ছে বিশ থেকে পঁচিশ বর্গমাইল। এই সীমারেখার মধ্যে বাঘ শিকারের সন্ধানে ঘুরে বেড়ায়। আর এভাবে ঘুরে বেড়াতে গিয়ে সুন্দরবনের বাঘকে প্রতিনিয়ত একাধিক খাল বা নদী পার হতে হয়। সুন্দবনের বাঘ ডাঙায় চলার মতো পানিতে সাঁতার কাটতেও দারুণ ওস্তাদ। পাহাড়ি জঙ্গলের হরিণ সাধারণত বাঘের তাড়া খেলে পানিতে লাফিয়ে পড়ে আত্দরক্ষার সুযোগ পায়, কিন্তু সুন্দরবনের হরিণ এই সুযোগ থেকে একেবারে বঞ্চিত। যে কিনা রাতের বেলা নিঃশব্দে সাঁতার কেটে নৌকায় উঠে ঘুমন্ত জেলে বাওয়ালীদের ধরে নিয়ে যেতে পারে, তার হাত থেকে বাঁচার জন্য পানিতে লাফিয়ে পড়া তো আত্দহত্যারই শামিল।এরা সাঁতার কাটার প্রাথমিক ট্রেনিং গ্রহণ করে মায়ের কাছ থেকে। শিকার ধরা বা আত্দরক্ষার ট্রেনিংয়ের মতোই মা এদের গুরুত্ব সহকারে সাঁতার শেখায়। সুন্দরবনের বাঘ শিকারের সন্ধানে ঘুরতে গিয়ে খরস্রোতা নদীর বিপরীতে সাঁতার কাটতে পারে মাইলের পর মাইল। দ্রুতগতি এবং নিঃশব্দে সাঁতার কাটায় এদের কোনো জুড়ি নেই।
এই বনের প্রায় নদীতেই রয়েছে দানবাকৃতির কুমির। সাঁতার কেটে নদী পার হওয়ার সময় প্রায়ই এদের সঙ্গে সুন্দরবনের রাজার যুদ্ধ বেধে যায়। বেশিরভাগ ক্ষেত্রে কুমিরকে পরাস্ত করে বাঘ প্রবল বিক্রমে নদী সাঁতরে তীরে উঠে আসে। তাই বলা যায়, এরা শুধু জঙ্গলের পরাক্রমশালী রাজা নয়, এই সর্ববৃহৎ ম্যানগ্রোভ বনের সব নদনদীর একচ্ছত্র দক্ষ সাঁতারুও বটে।
Subscribe to:
Post Comments
(
Atom
)
No comments :
Post a Comment