কাঁকড়াভুক ব্যাঙ
কাঁকড়াভুক ব্যাঙ বা ম্যানগ্রোভ ব্যাঙ সুন্দরবনের একটি সাধারণ ব্যাঙ। কিন্তু কোলা ও কটকটি ব্যাঙের সঙ্গে এদের খুব বেশি সাদৃশ্য থাকায় এত দিন আমরা তাদের পরিচিতি ঠিকমতো জানতে পারিনি। ব্যাঙটি আমাদের কাছে রহস্যময় হিসেবেই পরিচিত ছিল। এরা মূলত কাঁকড়া (crab) খেয়ে থাকে। cancri অর্থ কাঁকড়া (crab) আর vorus মানে খাওয়া (feeder, eating)। এদের খাদ্যাভ্যাস থেকেই এ ধরনের নামকরণ। তবে ম্যানগ্রোভ অঞ্চলের বাইরে থাকার সময় এটি পতঙ্গ ও ক্ষুদ্রাতিক্ষুদ্র প্রাণী খেয়ে থাকে। মনুষ্যবসতির কাছে স্বাদু পানির পরিবেশেও এদের বাস করতে দেখা যায়।কাঁকড়াভুক ব্যাঙের সঙ্গে আমাদের দেশে সচরাচর দেখা পাওয়া কোলা বা সোনা ব্যাঙ ও কটকটি ব্যাঙের সাদৃশ্য রয়েছে। কিন্তু এরা উপকূলীয় এলাকা থেকে দূরে বাস করে না। চোখের পেছন থেকে উভয় পাশে টানা শৈলশিরা বা উত্তোলিত রেখা এই ব্যাঙের গুরুত্বপূর্ণ বৈশিষ্ট্য। উপরন্তু পিঠের ওপর শৈলশিরা বা উত্তোলিত রেখা একটানা নয়, ভঙ্গুর। চোখের সামনে থেকে নাকের ছিদ্র পর্যন্ত পারতপক্ষে কোনো রেখা নেই, যা সহযোগী প্রজাতিতে আছে। এ ছাড়া চঞ্চু থেকে দেহের শেষ ভাগ পর্যন্ত সচরাচর কোনো হালকা ডোরা দেখা যায় না। এরা ছয় থেকে আট সেন্টিমিটার পর্যন্ত লম্বা হয়ে থাকে। দক্ষিণ-পূর্ব এশিয়ায়, বিশেষ করে মালয়েশিয়া ও সিঙ্গাপুরের বিজ্ঞানীদের মতে, পুরুষ-ব্যাঙের চেয়ে স্ত্রী-ব্যাঙ বড় হয়। এই ব্যাঙ আরেকটি অনন্য বৈশিষ্ট্যের অধিকারী। আর তা হলো, এরা শরীরে অতিমাত্রায় ইউরিয়া জমা রাখতে পারে। এ কারণে এরা প্রায় সাগরজলের সমপরিমাণ লবণাক্ততা সহনক্ষম। তবে এদের ডিম ফুটে বাচ্চা বের হয় কেবল স্বাদু পানিতে। বর্ষাকালে সুন্দরবনের বিভিন্ন অংশে সাময়িক কিছু ডোবা তৈরি হয়। এসব ডোবার মধ্যে এদের ডিম ফুটে বাচ্চা বের হয়। ক্যামব্রিজ ইউনিভার্সিটি প্রেস থেকে প্রকাশিত Knut Schmidt-Nielsen তাঁর প্রাণীর শারীরবৃত্ত: অভিযোজন ও পরিবেশ গ্রন্থে বলছেন, পূর্ণ বয়সী ব্যাঙের চেয়ে ব্যাঙাচির লবণাক্ততা সহনক্ষমতা বেশি। এই ব্যাঙ যে পরিমাণ ঘন লোনাপানিতে বাস করে, দেশের অন্য কোনো ব্যাঙ তা পারে না।
এগুলো কাঁকড়া খাওয়া (Crab-eating) ব্যাঙ বা ম্যানগ্রোভ ব্যাঙ নামে পরিচিত।বৈজ্ঞানিক নাম Fejervarya cancrivora। আগে এর নাম ছিল Rana cancrivora বা Limnonetes (Hoplobatrachus) cancrivora। ২০০৭ সালের জুলাইয়ে অধ্যাপক দত্ত উড়িষ্যার উপকূলে প্রথমবারের মতো এমন ব্যাঙের প্রজাতির সন্ধান পান।
আর আমাদের দেশে ব্যাঙের ৩৫টি প্রজাতির সঙ্গে আরেকটি নতুন প্রজাতি হিসেবে তা যুক্ত হলো।
মূল লেখা: রেজা খান (প্রথম আলো)
Subscribe to:
Post Comments
(
Atom
)
No comments :
Post a Comment