Animals Life in Bengali Description

কুমির

No comments

কুমির একটি বৃহদাকার জলজ সরীসৃপ, যেটি আফ্রিকা, এশিয়া, আমেরিকা ও অস্ট্রেলিয়ার গ্রীষ্মমণ্ডলীয় অঞ্চলে বাস করে। কুমির ক্রোকোডাইলিডে গোত্রভুক্ত যে কোন প্রজাতির সাধারণ নাম। কুমির সাধারণত মিঠাপানির নদী, হ্রদ, জলাভূমি এবং কখনো কখনো লোনা পানিতেও বাস করে। এরা সাধারণত মাছ, সরীসৃপ, স্তন্যপায়ী ইত্যাদি মেরুদন্ডী প্রাণী শিকার করে থাকে। কুমির উৎপত্তি অতি প্রাচীন কালে এবং ধারণা করা হয় ডাইনোসর যুগের পর এরা অল্পই পরিবর্তিত হয়েছে। বৈজ্ঞানিকদের মতে, এরা প্রায় ২০ কোটি বছর প্রাচীন, যেখানে ডাইনোসর বিলুপ্ত হয়েছে ৬.৫ কোটি বছর পূর্বে; অর্থাৎ কুমির বৃহৎ বিলুপ্তির পর্যায়গুলো পার হয়ে এসেছে।
সংস্কৃত "কুম্ভীর" শব্দটি থেকে "কুমীর" এসে থাকলেও "কুম্ভ" হয়তো ঘড়িয়ালের নাকের ডগার ঘড়া। সে অর্থে কুম্ভীর ঘড়িয়াল।অ্যালিগেটর ও কেইম্যান (অ্যালিগেটরিডে পরিবার) ও ঘড়িয়াল (গাভিয়ালিডে) হল কুমীরের (ক্রোকোডিলিডে পরিবার) জাতভাই -সবাই ক্রোকোডিলিয়া বর্গের অন্তর্গত। এই বর্গ আর্কোসরিয়াদের একমাত্র জীবিত বংশধর-অন্যভাগ ডাইনোসররা বহুদিন অবলুপ্ত।কুমিরের বিশেষত্বগুলো হল_
•পিঠের চামড়ার ভিতর হাড়ের মত শক্ত পাত (osteoderms)।
•বড় তুণ্ড, চোয়াল সজোরে বন্ধ হয় কিন্তু খোলার পেশী তত জোরালো নয়।
•ঘাড় বিশেষ বাঁকাতে পারেনা।
•জিভ মুখের বাইরে বার করতে পারেনা। জিভের নীচে প্রধান লবন রেচন গ্রন্থী।
•বিশাল লেজ পাশাপাশি চ্যাপ্টা- সাঁতারের প্রধান অঙ্গ, ও লড়াইয়ের অস্ত্র। পিঠে দুইসারি কাঁটা পায়ুর কাছাকাছি এসে একটি সারিতে পরিণত হয়।
•চার পা, হাঁসের মত লিপ্তপদ (web footed)
•ডুব দেবার সময় কান বন্ধ করতে পারে।
•মুখবিবর ও নাসিকাপথ আলাদা করার জন্য দ্বিতীয় তালু (টাকরা/ secondary palate)- তাই মুখে খাবার নিয়েও সহজে শ্বাস নিতে পারে।
•একমাত্র সরীসৃপ যার চারকক্ষ হৃৎপিণ্ড (ভ্রণাবস্থায় পুরো পৃথক হবার পর অলিন্দদ্বয়ের মধ্যের দেওয়ালে আবার সামান্য ফাঁক তৈরী হয়- ফোরামেন অফ প্যানিজ্জা। জলে ডুব দেবার সময় এটি খোলা হয়- তখন রক্ত ফুসফুসে যায়না।
•একমাত্র সরীসৃপ যার দাঁত স্তন্যপায়ীদের মত হাড়ে শেকর-গাঁথা (thecodont dentition)।
•নিকটতম জীবন্ত আত্মীয়রা সরীসৃপ নয়, পাখী।
বিশ্ব ঐতিহ্যের ৬ লাখ হেক্টরের বিশাল সুন্দরবনের মধ্যে প্রায় ২ লাখ হেক্টর নদী ও নালায় লবণ পানির কুমিরের সংখ্যা বৃদ্ধি ও তা সংরক্ষণের উদ্দেশ্যে করমজল এলাকায় ৩০ হেক্টর জমির ওপর বাংলাদেশে সর্বপ্রথম কুমির প্রজনন ও লালন পালন কেন্দ্র নির্মাণ করা হয়েছে। জীববৈচিত্র্য সংরক্ষণ প্রকল্প প্রথম পযর্ায়ে ৩২ লাখ টাকা ব্যয়ে ২০০১-২০০২ অর্থবছরে বিভাগীয় বন কর্মকর্তা, বন্যপ্রাণী ও টু্যরিজম বিভাগ খুলনার আওতায় অবকাঠামো নির্মাণের কাজ শেষ হয়। তবে দীর্ঘদিন প্রজনন ও লালন পালনের কাজ হয়নি। এখানে বাংলাদেশে বিলুপ্তপ্রায় ৩ প্রজাতির কুমির আছে। যদি দ্রুত কৃত্রিম প্রজনের উদ্যেগ গ্রহণ করা না হয় তবে তাও বিলুপ্ত হয়ে যাবে।

লবণ পানির কুমির প্রজাতির কুমির বিলুপ্তপ্রায়। আগে চট্টগ্রাম, কঙ্বাজার, চটহাজারিয়া সুন্দরবন এলাকায় এবং বরিশালের বিভিন্ন খাল ও নদীতে এই প্রজাতির কুমির দেখা যেত। বর্তমান সুন্দরবন এলাকায় মাত্র ১৫০ নদীতে ২০০ কুমির আছে যা ক্রমশ বিলুপ্তির পথে। এই প্রজাতির কুমির যেমন পরিবেশের ভারসাম্য রক্ষায় সহায়ক তেমনি বাণিজ্যিক ভিত্তিতে আন্তর্জাতিক বাজারেও এর চাহিদা অনেক বেশি। এই কুমিরের মাংস বিশ্ববাজারে অনেক মূল্যবান খাবার হিসাবে পরিচিত। শুধু তাই নয়, এর চামড়া দিয়ে উন্নতমানের জিনিসপত্র তৈরি হয়।
আগে মিঠা পানির কুমির বাংলাদেশের আনাচে কানাচের খাল-বিল, ডোবানালায় প্রচুর দেখা যেত। বর্তমানে মিঠা পানির কুমির বিলুপ্ত হয়ে গেছে। তবে বাগেরহাট জেলায় হজরত খান জাহান আলীর (র.) মাজারের পুকুরে মাত্র তিনটি কুমির আছে। প্রতি বছর সেগুলো পুকুর পাড়ে ডিম দেয়, তবে উপযুক্ত পরিবেশের অভাবে ডিমগুলো নষ্ট হয়ে যায়। করমজল কুমির প্রজনন কেন্দ্রের দক্ষ ব্যক্তি দিয়ে ডিমগুলোকে সংগ্রহ করে কৃত্রিম প্রজনন করালে এর সংখ্যা বৃদ্ধি সম্ভব হবে।
ঘড়িয়াল বা ইন্ডায়ান ঘড়িয়াল বিলুপ্তপ্রায়। এই প্রজাতির কুমির বর্তমানে দেশের রাজশাহী এলাকার পদ্মায় মাত্র ১০/১২টি আছে। এই প্রজাতির কিছু কুমির করমজলে নির্মিত কুমির প্রজনন কেন্দ্রে এনে কৃত্রিম প্রজননের মাধ্যমে সংখ্যা বৃদ্ধি করা সম্ভব। কুমির প্রজনন ও পালনের জন্য বন বিভাগ ২ কর্মকর্তাকে বিদেশ থেকে প্রশিক্ষণ দিয়ে আনে। কিন্তু এক কর্মকর্তা প্রশিক্ষণ নিয়ে এসেই বিদেশে ভাল চাকরি নিয়ে চলে গেছেন। এখন মাত্র এক কর্মকর্তা কুমির বিশেষজ্ঞ হিসাবে কাজ করছেন।
কৃত্রিম প্রজননের জন্য বন থেকে প্রাপ্তবয়স্ক কুমির সংগ্রহ অথবা বিদেশ থেকে আমদানি করে পুকুরে সংরক্ষণ করে ডিম দেয়ার সুযোগ সৃষ্টি করা হয়। এর বাইরে ডিম সংগ্রহ করে কৃত্রিমভাবে তা দিয়ে বাচ্চা ফোটানো হয়ে থাকে। প্রাকৃতিক উপায়ে এই ডিম থেকে মাত্র ২০ থেকে ৩০ ভাগ বাচ্চা পাওয়া যায়। তবে এই বাচ্চাগুলোর বেশির ভাগ স্ত্রীলিঙ্গের হয়। যদি ডিমগুলোকে কৃত্রিম উপায়ে তা দেয়া যায় তবে ৭০ থেকে ৮০ ভাগ বাচ্চা পাওয়া সম্ভব। তখন স্ত্রী-পুরুষ সমান বাচ্চা পাওয়া যায়। কুমিরের বাসা থেকে ডিম ইচ্ছামতো হাতে নিলে সঙ্গে সঙ্গে ভেতরের ভ্রূণ নষ্ট হয়ে যায়। তাই এ কাজটি করতে প্রশিক্ষণের প্রয়োজন।
প্রতি বছর সুন্দরবন এলাকায় প্রচুর বাচ্চা কুমির জন্মগ্রহণ করে। কিন্তু এই বাচ্চা কুমিরগুলো বাঁচে না। তার অনেক কারণ আছে। কারণগুলো হচ্ছে, খুব ছোট বাচ্চা যখন পানিতে ভাসতে থাকে তখন বাজপাখি, চিল, শকুন, গুইসাপ, ভোদড় খেয়ে ফেলে। ভেটকি ও পাঙ্গাশ জাতীয় রাক্ষুসে বড় মাছও এই বাচ্চাগুলোকে খেয়ে ফেলে। সুন্দরবন এলাকার জেলেরা যখন মাছ মারে তখন তাদের জালে আটকা পড়ে। মাছ ধরার সময় আক্রমণাত্মক মনোভাবের জন্য জেলেরা কুমিরের বাচ্চা মেরে ফেলে। মা ছাড়া ছোট কুমিরকে খেয়ে ফেলে বড় কুমির।
যদি প্রতিবছর এই বাচ্চাগুলোকে সংগ্রহ করে করমজল কুমির লালন-পালন কেন্দ্রে সংরক্ষণ করা যায় তাহলে কুমিরের সংখ্যা অনেক বেড়ে যাবে। সুন্দরবনের বিভিন্ন এলাকায় ছেড়ে দিলে তারা প্রকৃতির সঙ্গে খাপ খাইয়ে নিতে পারবে।
করমজলে রোমিও জুলিয়েট নামের এক জোড়া কুমির বাংলাদেশের ভালবাসার প্রতীক হয়ে রয়েছে। এই রোমিও জুলিয়েট সর্বপ্রথম প্রজনন কেন্দ্রে ১৯ ডিম দেয়। এখান থেকে ১৬ বাচ্চা পাওয়া যায়। এ ঘটনা ২০০৫ সালে ঘটেছে। এরপর ২০০৬ সালে ডিম দেয় ৩৬। এখান থেকে ২৬ বাচ্চা পাওয়া যায়। ২০০৭ সালে ৪১ ডিম দেয়। এখান থেকে ২৯ বাচ্চা পাওয়া যায়। ২০০৮ সালে ৪১ ডিম থেকে ৩০ বাচ্চা পাওয়া যায়। সর্বশেষ ২০০৯ সালে ৪১ ডিম দেয়। এই ডিম থেকে ২৭ বাচ্চা পাওয়া গেছে। মোট ১২৮ বাচ্চা করমজলে ফোটানো হয়েছে। এ ছাড়া জেলেদের কাছে ৩৪ কুমিরের বাচ্চা পাওয়া গেছে। সব মিলিয়ে ১৬২ বাচ্চা করমজলের প্রজনন কেন্দ্রে ছিল। কিন্তু আইলার জলে ৬১ বাচ্চা করমজল থেকে চলে গেছে। এই বাচ্চাগুলো দুই মিটার পর্যন্ত লম্বা হলে সুন্দরবনের যে অংশে কুমির নেই সেই অংশে ছেড়ে দেয়া হবে।
কুমির প্রজনন কেন্দ্রে কুমিরগুলোর জীবন খুবই কষ্টে চলছে। অর্থের অভাবে প্রকল্পের কুমিরগুলোর খাবার যোগাড় হচ্ছে অনেক কম। এতে তাদের প্রজনন ক্ষমতা কমে যাচ্ছে। দেশের বিলুপ্ত প্রজাতির কুমির উৎপাদন বাড়াতে হলে এই প্রকল্পের প্রতি সরকারের নজর দেয়া খুবই জরুরী। বিলুপ্ত প্রজাতির কুমির রিকভারির আওতায় ভারত সরকার ৪০ মগর প্রজাতির কুমির বাংলাদেশ সরকারকে উপহার দেয়। এই কুমিরগুলো থেকে এখন পর্যন্ত প্রজনন করা সম্ভব হয়নি। ভারত সরকারের দেয়া ৪০ কুমিরের মধ্যে ২৯ কুমির ডুলাহাজারা সাফারি পার্কে রাখা হয়েছে। বাকি ৬ কুমির খান জাহান আলীর মাজারে রয়েছে। ৫ কুমির ঢাকা চিড়িয়াখানায় রাখা হয়েছে। খান জাহান আলীর মাজারে যে মেয়ে কুমিরটি রয়েছে সেটি অসুস্থ হলে করমজলে চিকিৎসার জন্য আনা হয়। সেই থেকে ওই কুমিরটি এখানে আছে। পুরুষ কুমিরের অভাবে এর প্রজনন করা যাচ্ছে না। সুষ্ঠু পরিকল্পনা না থাকার কারণে কুমির প্রজননে নানা প্রতিকূলতার মুখোমুখি হতে হচ্ছে।
ফেব্রুয়ারি ২৮ পুরান ঢাকার হোসেনি দালনের পুকুর থেকে উদ্ধার করা বিরল প্রজাতির কুমিরটি এখন বিচরণ করছে কক্সবাজারের ডুলাহাজারা সাফারি পার্কের হ্রদে।

প্রকল্প পরিচালক তপন কুমার দের নেতৃত্বে ডুলাহাজারা সাফারি পার্কের্ব পার্কের কর্মীরা বুধবার সকালে পার্কের হ্রদে কুমিরটি ছাড়েন। নতুন এই সদস্য নিয়ে পার্কটিতে কুমির পরিবারের সদস্য সংখ্যা দাঁড়ালো ৩৩ এ। এর আগে ভারত থেকে বিরল প্রজাতির ৪০ টি কুমির এনে সাফারি পার্কে ছাড়া হয়েছিল। তার মধ্যে আটটি মারা যায়।
তপন কুমার দে জানান, হোসেনি দালানের পুকুর থেকে উদ্ধার করা কুমিরটির প্রজাতি বিলুপ্তপ্রায়। বর্তমানে বাংলাদেশে এ ধরণের মাত্র ৪০ টি কুমির রয়েছে। এর মধ্যে ৩২টি ডুলাহাজার সাফারি পার্কে এবং আটটি রয়েছে ঢাকা চিড়িয়াখানা, খুলনার খানজাহান আলীর মাজার ও সুন্দরবন বন্য প্রাণী প্রজনন কেন্দ্রে। এছাড়া ময়মনসিংহের ভালুকায়(ঢাকা থেইকা ভালুকা গামী কিছু গেটলক সার্ভিস আছে, ভালো সারভিস দেয়। ঐগুলো একটাতে উইঠা কৈলেও হৈবো কুমিরের খামারে যাইতে চান। আর নিজের গাড়ীতে গেলে তো আরও সহজ। ঢাকা থেকে গেলে ভালুকা ব্রীজের আরো আগেই হাতের ডান দিকে পড়বে কুমিরের খামার।)
Reptiles Farm Limited (RFL)
Corporate Office:
Suite: 2-B, 1/8 Block D
Lalmatia, Dhaka 1207
Telephone: +880 171 303 8796


Farm Office:
Mouja: Hatiber, Union: Uthura
Thana: Bhaluka
District: Mymensingh
Telephone: +880 171 409 0497
Fax: +1 360 364 9352
Email: mail@reptilesfarm.net
Blog: www.crocodilefarm-rfl.blogspot.com,
www.comments-rfl.blogspot.com
ওয়েবসাইট: http://www.reptilesfarm.net/index.php
আফ্রিকা এবং অস্ট্রেলিয়ায় কুমির বেশি দেখা যায়। এটি একটি বিপজ্জনক প্রাণী। দ্রুতগতিসম্পন্ন এ প্রাণীটির রয়েছে হাড় গুঁড়িয়ে দেওয়ার মতো খুবই শক্তিশালী চোয়াল। কুমির দ্বারা বছরে প্রায় ৭০০ থেকে ৮০০টি দুর্ঘটনা ঘটে।

No comments :

Post a Comment