পান্ডা
বাঁশের কঞ্চি ধরার জন্য জায়ান্ট পান্ডার পাঁচটি সাধারণ আঙুল ছাড়াও হাতের তালু ও কব্জির সংযোগস্থলে একটি বুড়ো-আঙুলের বৃদ্ধাঙ্গুষ্ঠের) মত অংশ দেখা যায়। এটি আঙুল নয়। পান্ডার একার জন্য ভগবানের দানও নয়। বর্ধিত রেডিয়াল সিসাময়েড অস্থি মাত্র-- যা জায়ান্ট পান্ডার নিকট আত্মীয় (উরসিডে পরিবার)-- লাল পান্ডা ও ভালুকেরও খানিকটা বড়, তবে এতটা না।
এরা যে শ্বাপদ এবং বাঁশ পাতা খাওয়ার জন্য পুরোপুরি বিবর্তিত নয় তার অন্যতম প্রমাণ এদের খাদ্যনালী। তৃণভোজী প্রাণীদের খাদ্যনালী লম্বা হয় এবং পাকস্থলীর আগে অথবা বৃহদান্ত্রের সিকাম বা কোলনে আঁশ(fibre) গেঁজিয়ে পাচন সম্পূর্ণ করার ব্যবস্থা থাকে। পান্ডার এর কোনটাই নেই। আছে শুধু অন্যান্য শ্বাপদদের মত কেবল ছোট (নাতিদীর্ঘ) ক্ষুদ্রান্ত্র। তাই খুব বেশী পরিমাণ (বাঁশ পাতা) খেতে হয়। বাঁশগাছ ছেড়ে নামার পর্যন্ত সময় পায়না।
পাণ্ডা বলতে গেলে বাঁশ পাতা আর কঞ্চি ছাড়া কিছুই খায় না। মাঝে-মধ্যে শাকসবজি, মাছ বা অন্য ছোট প্রাণী খেলেও এদের খাবারের নিরানব্বই শতাংশই বাঁশ। পাণ্ডা খুব দ্রুত খায়, প্রচুর পরিমাণে খায় আর এতে তারা সময় ব্যয় করে দিনে প্রায় ১২ ঘণ্টা। এর কারণ_ এরা যে পরিমাণ খাবার খায় তার কেবল পাঁচ ভাগ খাবার হজম হয়। আবার বাঁশ খুব পুষ্টিকর খাবারও নয়। তবে বাঁশ গাছের সবচেয়ে মূল্যবান অংশ হলো এর পাতা এবং কচি কঞ্চিগুলো আহারের সময় তাই এ দিকেই বেশি মনোনিবেশ করে। তাই শরীর ঠিক রাখার জন্য তাদের অনেক খেতে হয়। ১২ ঘণ্টায় তাদের শরীরের ১৫ শতাংশ ওজন বেড়ে যায়। তাই তারা দ্রুত খায়। পাণ্ডার মাড়ির দাঁত বেশ বড় আর চ্যাপ্টা। দাঁতের এ ধরনের গঠন তাদের বাঁশ পাতা, কঞ্চি বা কচি কাণ্ড টেকে আনতে সাহায্য করে। বাঁশ পাতা মুখের কাছে আনার জন্য তারা সামনের পা দিয়ে কাণ্ড আঁকড়ে ধরে, তারপর পাতা নিচে নেমে এলে মুখ দিয়ে তা ছিঁড়ে নেয়। বাঁশ গাছের অনেক ধরনের প্রজাতি রয়েছে। বর্তমানে পাণ্ডাদের আবাসস্থলে অল্প কয়েক ধরনের বাঁশ জন্মে। পাণ্ডা যেখানে বাস করে সেখানে কম করে হলেও অন্তত দুই প্রজাতির বাঁশ থাকতে হয়, অন্যথায় তাদের ক্ষুধার্ত থাকতে হয়। পাণ্ডা পাহাড়ি অঞ্চলে খাবারের খোঁজে অতি সহজেই এক জায়গা থেকে অন্য জায়গায় যেতে পারে, কিন্তু অধিকাংশ পাহাড়ি উপত্যকা এখন জনবসতিপূর্ণ হয়ে পড়ছে। আর পাণ্ডা খুব লাজুক প্রাণী, তারা কখনো মানুষের আবাসস্থলের কাছেও যায় না। এতে পাণ্ডাদের এখন সীমিত গণ্ডিতে বসবাস করতে হচ্ছে। মানুষ এখন পাহাড়ের ঢালে গাছ কেটে চাষাবাদ শুরু করেছে, তাই পাণ্ডাদের আবাসস্থল দিন দিন ছোট হয়ে আসছে। এদিকে নতুন আরেক সমস্যার সৃষ্টি হয়েছে। পাণ্ডাদের আবাসস্থলের বাঁশগুলো যখন প্রাকৃতিকভাবেই মরে যায় তখন তারা খাবারের খোঁজে অন্য জায়গাতেও যেতে পারে না। এতে তাদের ভীষণ ক্ষুধার্তও থাকতে হয়। এ সময় অনেক পাণ্ডা মারাও যায়। ভাবতে অবাক লাগে, বিশ্বে আছেই মাত্র এক হাজারের মতো পাণ্ডা, তাদেরও আমরা ঠিকমতো বাঁচতে দিতে পারছি না। চীন সরকার এবং অন্যান্য বন্যপ্রাণী সংরক্ষণ সংস্থা অবশ্য বিভিন্ন পদক্ষেপ নিয়েছে পাণ্ডাদের সংরক্ষণ করার জন্য। বিজ্ঞানীরাও গবেষণা চালিয়ে যাচ্ছেন তাদের খাদ্যের নতুন উৎস খুঁজে বের করার জন্য। তবে সব কথার শেষ কথা, আমরা কখনো চাইব না তারা পৃথিবীর বুক থেকে হারিয়ে যাক!
নাজমুল হক ইমন
Subscribe to:
Post Comments
(
Atom
)
No comments :
Post a Comment